২২শ কোটি টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা খাগড়াছড়িতে,খাগড়াছড়িতে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন ভালো হয়েছে। তাই খুশি সবুজ পাহাড়ের আমচাষিরা। এখানে প্রতি বছর বাড়ছে বাগান। যুবকরা বাগান করছেন বেশি। আম চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে।
২২শ কোটি টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা খাগড়াছড়িতে
জেলায় প্রায় ৪ হাজারের মতো আম বাগান রয়েছে। ৩ হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১২ মন আম পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা করে বিক্রি হলে এ বছর কৃষকরা ২২শ কোটি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন।
তবে অনাবৃষ্টির কারণে এবার আমের আকার ছোট হয়েছে বলে জানান চাষিরা।
খাগড়াছড়ি সদরের রোওয়াসায়াপাড়া এলাকার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা পরিপক্ক আম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পারছেন। শ্রমিকরা গাছে উঠে আম সংগ্রহ করছেন। আবার কেউ বাছাই করে ঝুকিতে আম রাখছেন। ঝুড়ি ভর্তি হলে পিকাআপভ্যান ও চাঁদের গাড়িতে করে শহরের বিভিন্ন স্থানে রাখছেন। পরে সেখান থেকে সারাদেশে আম পাঠাচ্ছেন। এভাবে বাগান মালিকরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রোওয়াসায়াপাড়া এলাকার আম বাগানের মালিক বলেন, আমার পনের একরের তিনটি আম বাগান থেকে এবার ৬০ থেকে ৭০ টন আম পাওয়া পাব। তাতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করি।
বাগান মালিক বলেন, বাগানে বেশির ভাগ আম্রপালি, বারি-৪, বাঙ্গুয়েসহ তার পাশাপাশি কিছু বিদেশি জাত আছে। গোপালভোগ, ফজলি বিক্রি শুরু হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ ও সার কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করছে।
পানখাইয়াপাড়া এলাকার আম বাগান বলেন, গত বছর চাইতে এ বছর ফলন প্রচুর। নিজের ত্রিশ একর জমিতে তিনটি বাগানে আছে। এছাড়া চুক্তিতে বাগানের আম বিক্রি করে দেড় কোটি টাকা পাব বলে অশা করি।
এ বছর ভালো আবহাওয়ার কারণে ফলন যতেষ্ট ভালো বলা যায়। তবে অনা বৃষ্টির কারণে আমের আকার ছোট হয়েছে আম্রপালিসহ সকাল জাত। তাছাড়া ফলন ভালো।
গত বছর তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। ২৫ একর টিলার মধ্যে আম বাগানে আম্রপালি, রাঙ্গুয়ে, বারি-৪ সহ বিভিন্ন প্রজাতের সব মিলিয়ে ৮টি বাগান আছে। আট বাগানে এ বছর দেড়শ টন ফলন পাওয়া বলে আশা করি তাতে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় হবে।
মারমা ফলদ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুষি চৌধুরী বলেন, গত বছরের চাইতে এ বছর সমিতির ৮২ জন সদস্যের সবার বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। আগাম বৃষ্টি না হওয়ায় আমের আকার ছোট এসেছে।
বাবুষি চৌধুরী বলেন, আম বিক্রি শুরু হলে তিনটা প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত টোল দেওয়ার কারণে আম কিনতে ব্যাপারীরা খাগড়াছড়িতে আসছে না। তাছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসে টাকা নেয় বেশি। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে এক কার্টন আম পাঠালাম এসএ পরিবহনে, কেজি প্রতি ২০ টাকা নিল।

খাগড়াছড়ি ফলজ বাগান মালিক সমবায় সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, জেলায় প্রায় ৪ হাজারের মতো আম বাগান আছে। গত বছর তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। বাজারজাত নিয়ে চিন্তায় আছি। খাগড়াছড়ির টোল কেন্দ্রগুলো ডাকাতি করে। পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনে করে না।
তার কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা টোলকেন্দ্রের ডাকাতির কারণে খাগড়াছড়িতে আম কিনতে আগ্রহ কমিয়ে পেলেছে। প্রশাসনের আন্তরিকতা সদিচ্ছা লাগবে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা আম উৎপাদনের উল্লেখ্যযোগ্য জেলা। এই জেলার মাটির পুষ্টি উপাদান জলবায়ু আম উৎপাদনের উপযোগী। বিভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন হয়। যেমন খাগড়াছড়ির বিখাত সুমিষ্ট আম্রপালি আম, বারি-৪ সহ অন্যান্য জাতের আম।
খাগড়াছড়ির খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, বর্তমানে আম চাষিরা আধুনিক চাষাবাদ প্রদ্ধতি ব্যবহার করছে। যার ফলে ভালো ফলন পাচ্ছে। আমরা বাগানে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়। নতুন নতুন জাত উৎপাদন করে থাকি এবং চাষিদের সরকারি নির্ধারিত মূলে চারা বিতরণ করে থাকি।
তিনি বলেন, বাগানিরা বছরে যে লাভটা পায় ওই লাভ দিয়ে সারা বছর চলতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে অনেক পাহাড় পর্বত রয়ে গেছে। এইগুলো অনেক ফল বাগানের আওতায় আসতেছে। প্রতি বছর আবাদ বাড়ছে।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আম্রপালি আমের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তার কারণ হলো এই এলাকার আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকুল ছিল। এবং কৃষকরা সময়মতো সঠিক পরিচর্যা করেছে। কৃষি বিভাগের পরার্মশ অনুযায়ী কাজ করেছে, যার কারণে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আলতাফ আরও হোসেন বলেন, আম্রপালি আমটা উদ্ভাবন করা হয়েছে কারণ এটি প্রতি বছর ফল দেয়। পোকা-মাকড় দমনের প্রদ্ধতিতে কৃষকরা এখন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। আম্রপালি আম জাতটা খাগড়াছড়ি জেলাতে আবহাওয়া অনুকুল হওয়ায় এ অঞ্চলে এটার ফলন ভালো দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, এই আম জেলার চাহিদা মেটানোর পরে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় বাজারগুলোতে সরবারহ করছেন এবং ইদানিং এখানে রফতানিযোগ্য আম চাষ করা হচ্ছে। এই আমগুলো যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশের বিভিন্ন রফতানি হচ্ছে।
এই আম চাষ করে চাষিদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হয়েছে। কৃষি অধিদফতরের জেলা, উপজেলা এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আম চাষিদের আম পরিচর্যাসহ দব বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
কিশোর কুমার মজুমদার আরও বলেন, এখানে ৩ হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়। ফলন হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১২ মন পাওয়া যায়। মৌসুমে প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা করে বিক্রি হলে আমরা দেখেছি এই বছর কৃষকরা ২২শ কোটি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: