আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হলো সৌদিফেরত ৪ শিশুর দায়িত্ব নেয়নি কেউ

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হলো সৌদিফেরত ৪ শিশুর দায়িত্ব নেয়নি কেউ,অবশেষে খাগড়াছড়ি’র সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে  ঠাঁই হয়েছে সৌদি প্রবাসী বাবা মৃত জাহাঙ্গীর আলম ও নিখোঁজ ইন্দোনেশিয়ান মায়ের চার সন্তানের। সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার চার মাস পরেও নিকটাত্মীয়দের কেউ দায়িত্ব না নেওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তে তাদের ঠাঁই হয়েছে এই আশ্রয় কেন্দ্রে।

 

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হলো সৌদিফেরত ৪ শিশুর দায়িত্ব নেয়নি কেউ

 

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হলো সৌদিফেরত ৪ শিশুর দায়িত্ব নেয়নি কেউ

এখানেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত চার ভাই-বোন একসাথে বেড়ে উঠবে। এখানে থাকা, খাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়া ও কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাবে মরুর দেশে জন্ম নেওয়া জামিলা, মোজাহিদ, ইয়াসমিন ও সামিয়া।

২১ বছর আগে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও জাগিরপাড়া এলাকা থেকে উন্নত জীবনের আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমান এই চার শিশুর বাবা জাহাঙ্গীর আলম। প্রবাসে সবজি বিক্রেতা হিসেবে জীবিকা শুরু করেন তিনি।

সেখানে পরিচয় হয় ইন্দোনেশিয়ান এক নারীর সঙ্গে। পরিচয় গড়ায় পরিণয়ে। একে একে তাদের কোল জুড়ে আসে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান। স্ত্রী, চার সন্তানকে নিয়ে ভালোই কাটছিলো জাহাঙ্গীর আলমের প্রবাস জীবন।

বছর ছয়েক আগে হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বামী-সন্তান ফেলে নিরুদ্দেশে যান জাহাঙ্গীর আলমের ইন্দোনেশিয়ান স্ত্রী। এরপর আর খোঁজ মেলেনি তার।  গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী অসুস্থ হয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় মারা যান জাহাঙ্গীর আলম। সেখানেই দাফন করা হয় তাকে।

মায়ের আকস্মিক নিরুদ্দেশ যাত্রা ও বাবার মৃত্যুতে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে চার ভাই-বোন। এরপর তাদের ঠাঁই হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড পরিচালিত জেদ্দার বাংলাদেশী দূতাবাসের সেইফ হোমে।

আট মাস পর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহায়তায় পিতৃভূমি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় তাদের। বিমানবন্দর থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের তেঁজগাও সরকারি শিশু পরিবারে।

চার মাস সেখানেই ছিলো চার ভাই-বোন। এই সময়ের মধ্যে আত্মীয়দের কেউ দায়িত্ব নেয়নি তাদের। অবশেষে চার ভাই-বোনকে একসঙ্গে রাখার সরকারি সিদ্ধান্তে পাঠানো হয় খাগড়াছড়ি সরকারি মিশ্র শিশু পরিবারে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সব হারিয়েও এখন একসঙ্গে থাকতে পারাটাই পরম আনন্দের এই চার ভাই-বোনের কাছে।

সৌদি প্রবাসী মৃত জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়েজানান, বাবা মারা গেছেন ১ বছর আগে। মা থেকেও নেই। পৃথিবীতে এখন আমাদের আপন বলতে শুধু আমরা চার ভাইবোন। সরকার আমাদের একসঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারি।

খাগড়াছড়ি সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক টোকেয়া বেগম জানান, খাগড়াছড়ি’র এই মিশ্র শিশু পরিবারে একসঙ্গে বেড়ে উঠবে এতিম চার ভাই-বোন। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এখানেই বেড়ে উঠবে তারা। এখন তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ।

মা-বাবা হারানো এই চার ভাই-বোন সরকারি শিশু পরিবারে আদর-যত্নে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী। তাদের পাশে থেকে সবরকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এই মিশ্র শিশু পরিবারে সরকারি খরচে থাকা, খাওয়া ও পড়ালেখার পাশাপাশি মেয়েদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ ও ছেলেদের কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও আছে।

বাংলাদেশে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত মোট ৮৫টি শিশু পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে একমাত্র মিশ্র শিশু পরিবার রয়েছে খাগড়াছড়িতে। জামিলারাসহ এখানে বর্তমানে আরও ৫০ জন ছেলে ও ৫০ জন মেয়ে শিশু রয়েছে।

 

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হলো সৌদিফেরত ৪ শিশুর দায়িত্ব নেয়নি কেউ

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment